আখের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা

আখের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা, আখের গুড় চেনার উপায়, সম্পর্কে আপনি কি জানেন। আপনি যদি আখের গুড়ের উপকারিতা অপকারিতা ও আখের গুড় চেনার উপায়, সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের আমাদের এই পুরো আর্টিকেল শুধুমাত্র আপনার জন্য, আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।

আখের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা


ভূমিকা : আখ বা আখের গুড় আমাদের সকলেরই পছন্দের একটি খাবার, আজ আমরা আখের গুড় সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চলেছি, গুড়ের গুনাগুন জানলে আপনি সত্যিই অবাক হবেন, আয়ুর্বেদের মতে গুড় সারিয়ে তুলতে পারে পেটের নানা ধরনের অসুখ।আখের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। আখের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা, আখের গুড় চেনার উপায়, চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক।

আখের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা


উপকারিতা : আখের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জিংক ও সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম , ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক, এ সকল উপাদান গুলো আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে, যেকোনো ধরনের পেটের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। জন্ডিস রোগীর জন্য আখের গুড় খাওয়া খুবই উপকারী। জন্ডিস রোগী যদি নিয়মিত আখের রস বা আখের গুড় খেয়ে থাকে তাহলে খুব দ্রুত জন্ডিস সেরে উঠে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায় নিয়মিত আখের গুড় খেলে।

অনেকেই মনে করে আখের গুড় খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়, আখের গুড় খেলে ব্লাড সুগার বারেনা বরং নিয়ন্ত্রণে থাকে। আখের গুড়ে থাকা ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরের এলার্জি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট ও খুসখুসে কাশি দূর করতে সাহায্য করে। আখের গুড়ে থাকা আইরন আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে, এর সাথে সাথে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে আখের গুড়।

অপকারিতা : আখের গুড়ে যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমন অপকারিতা রয়েছে, চলুন তাহলে আখের গুড়ের অপকারিতা গুলো জেনে নেই, যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন গুড় না খাওয়াটাই ভালো তাদের জন্য । শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে আখের গুড়। সামান্য পরিমাণে খেলে কোন সমস্যা হয় না, তবে নিয়মিত অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। কারণ আখের গুড়ে কার্বোহাইড্রেটের পরিমান মাত্রা বেশি থাকে।

গুড় তৈরির পরিবেশটা যদি অস্বাস্থ্যকর হয় তাহলে সেই গুড় খেলে , আমাদের শরীরের জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। সদ্য তৈরি করা গুড় খেলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন হজমের সমস্যা ডায়রিয়া হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রমতে মাছ আর গুড় একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়, মাচ আর গুড় একসঙ্গে খেলে শরীরে পরিপাকতন্ত্রে আলসারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আখের গুড় চেনার উপায়


আখের গুড় চেনার উপায় আমাদের সকলের জানা উচিত, গুড়ের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার জন্য আমাদের প্রয়োজন কাচের একটি পরিষ্কার গ্লাস, ও এক গ্লাস পানি, এক গ্লাস পানির সঙ্গে গুড়ের একটা টুকরো মিশিয়ে দিতে হবে । গুড় যদি আসল হয় তাহলে আস্তে আস্তে পানির সাথে মিশে যাবে, আর যদি গুড় আসল না হয়, তাহলে গ্লাসের সাথে আটকে যাবে। এভাবে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারবো কোন গুড় আসল, আর কোন গুড় আসল নয় ।

আখের গুড় খাওয়ার নিয়ম


গুড় দিয়ে নানা রকমের পিঠাপুলি তৈরি করা হয়। এর সাথে সাথে পায়েস হয়ে রান্না করা হয়, ঘুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, সরাসরি গুড় খাওয়ার চেয়ে রান্না করে অথবা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে গুড় খাওয়া ভালো। প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে চিনি বা গুড় খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে, কিন্তু চিনি খেলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রত্যেকদিন এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি গুড় মিশিয়ে খেলে , আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও হজম ক্ষমতা বেড়ে যায়। এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক মুঠ গুড় মিশিয়ে শরবত করে খেয়ে নিলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ভালো আর রান্না করার সময় চিনি না দিয়ে গুড ব্যবহার করলে, সে হালুয়া খেলে আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। কোন খাবার রান্না করার সময় চিনি ব্যবহার না করে, গুড় দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়াটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।

আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে


আখের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুন ও উপকারিতা, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, এর সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আখের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও শর্করা, এ ক্যালোরি ও শর্করা আমাদের শরীরে পানি ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে সাহায্য করে থাকে। আখের গুড়ে ক্যালরি বেশি থাকার কারণে, আখের গুড় নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে দ্রুত ওজন বাড়তে সাহায্য করে। আখের গুড় সামান্য পরিমাণে খেলে কোন সমস্যা হয় না, কিন্তু নিয়মিত যারা আখের গুড় খেয়ে থাকে , তাদের দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়।

গুড় খেলে কি সুগার হয়


সুস্থ মানুষ গুড় খেলে সুগার হয় না, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে গুড় খাওয়া ঠিক নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি নিয়মিত গুড় খেয়ে থাকে তাহলে তাদের, ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গুড় একটি মিষ্টি খাবার। ডাইবেটিস রোগীদের খাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগী যারা অল্প পরিমাণে চিনি দিয়ে চা খেয়ে থাকেন। তারা যদি মনে করে চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন, তবে খেতে পারেন, চিনির চাইতে গুড় খাওয়া অনেক ভালো, ডায়াবেটিস রোগীরা চিনি খেলে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু বেশি পরিমাণে খাওয়া চলবে না সামান্য পরিমাণে খেতে হবে। আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মিষ্টি খাওয়া উচিত।

চিনি ও গুড়ের পার্থক্য


চিনি ও গুড় একই উপকরণ থেকে তৈরি করা হয়, যদিও চিনি ও গুড় একই উপকরণ থেকে তৈরি হয় তারপরও এতে, পুষ্টিগুণ কমবেশি রয়েছে, চিনি আমাদের শরীরে শুধুমাত্র ক্যালোরি দিয়ে থাকে, আর এইদিকে গুড় আমাদের শরীরে ক্যালরির পাশাপাশি আইরন, খনিজ, ফাইবার, উপাদান দিয়ে থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। গুড় একটি প্রক্রিয়াহীন , আর চিনিকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তাই চিনি থেকে গুড় আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো।

শেষ কথা :আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন, তা অবশ্যই আমাদের সাথে শেয়ার করবেন, আর আপনার বন্ধুদেরও শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমরা সবসময় চেষ্টা করি কম সময়ের মধ্যে আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নতুন নতুন আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথে থাকুন।








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url